×

আলিগড় আন্দোলন সর্ম্পকে সংক্ষিপ্ত আলোচনাঃ (Aligarh Movement).

আলিগড় আন্দোলন সর্ম্পকে সংক্ষিপ্ত আলোচনাঃ (Aligarh Movement).

উনবিংশ শতক নাগাদ ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালে মুসলিম সমাজ পাশ্চাত্য শিক্ষাগ্রহণ না করার ফলে শিক্ষা ও চাকুরির ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে। এই অবস্থায় মুসলিম সমাজের ত্রাণকর্তা স্যার সৈয়দ আহমেদ খান (১৮১৭-৯৮ খ্রি.) পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে আলিগড় অ্যাংলো-ওরিয়েন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এই আলিগড় কলেজকে কেন্দ্র করে মুসলমান সমাজে যে সংস্কার আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল, তাকে আলিগড় আন্দোলন বলা হয়।

আলিগড় আন্দোলনের সূত্রপাত:

১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পরে মুসলমানরা ইংরেজদের চোখে সন্দেহের পাত্র হয়ে ওঠে। ফলস্বরূপ তারা প্রশাসন ও শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে। তখন স্যার সয়দ আহমদ খান উপলব্ধি করেন যে, আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণ ছাড়া মুসলিম সমাজের উন্নতি সম্ভব নয়। তিনি মুসলিম সমাজকে আধুনিক চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য সামাজিক ও শিক্ষাগত সংস্কারের উদ্যোগ নেন।

আলিগড় আন্দোলনের উদ্দেশ্য:

  • মুসলমানদের আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার সঙ্গে পরিচিত করা।
  • সমাজে কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা ও গোঁড়ামি দূর করা।
  • মুসলমানদের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক জীবনে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত করা।
  • আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে মুসলিম যুবকদের যুক্ত করা।

আলিগড় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ:

আলিগড় আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাণপুরুষ ছিলেন স্যার সৈয়দ আহমেদ খান। তাঁর সহযোগী নেতৃবৃন্দ ছিলেন- কবি আলতাফ হুসেন আলি, শিক্ষাবিদ ইউসুফ আলি, খুদাবক্স, মৌলবি নাজির আহমেদ, শিবলি নোমানি প্রমুখ।

আলিগড় আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য দিকসমূহ:

আত্মপরিচয়ের উন্মেষ:

আলিগড় আন্দোলন মুসলমানদের মধ্যে জাগিয়ে তুলেছিল ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যবোধ। স্যার সৈয়দ আহমেদ মুসলমানদের একটি স্বতন্ত্র সংস্কৃতির ধারক হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং তাদের পৃথক জাতিসত্তার তত্ত্ব তুলে ধরেন। ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠী স্যার সৈয়দকে ভারতে দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রথম প্রবক্তা বলে উল্লেখ করেছেন।

ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন:

সৈয়দ আহমেদ উপলব্ধি করেন যে, ঔপনিবেশিক আমলে ইংরেজ শাসনের বিরোধিতা করা মুসলমান সমাজের পক্ষে হিতকর হবে না। তাই সরকারের ক্ষোভপ্রশমনের জন্য ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে তিনি দ্য লয়্যাল মহামেডানস অফ ইন্ডিয়া নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। এই পুস্তিকায় নানা তথ্য দিয়ে স্যার সৈয়দ আহমেদ প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে মুসলমান সমাজ সচেতনভাবে জড়িত বা সক্রিয় ছিলেন না।

আধুনিক শিক্ষার প্রসার:

আলিগড় আন্দোলনের মাধ্যমে মুসলমানরা উপলব্ধি করেছিলেন যে, ইংরেজি শিক্ষা ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কে অবহিত না হলে তারা হিন্দুদের থেকে পিছিয়ে পড়বে। তাই এই আন্দোলনের মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে আধুনিক শিক্ষা গ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছিল।

অন্যান্য সংস্কার:

শিক্ষার পাশাপাশি সমাজের নানা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্যেও একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয় আলিগড় আন্দোলনে। এখানে বহুবিবাহ, তালাক প্রথার বিরোধিতার পাশাপাশি নারীর অবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর উপরেও জোর দেওয়া হয়।

আলিগড় আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা:

সৈয়দ আহমেদ খান পরিচালিত এই আন্দোলন ছিল সম্পূর্ণভাবে ধর্মীয় মোড়কে আবৃত এবং মূলত উচ্চবিত্ত মুসলমানদের মধ্যে সীমিত। সাধারণ মানুষের উপর এর বিশেষ প্রভাব পড়েনি। মুসলিম সমাজের অধিকাংশ এমনকি নারীরাও খুব বেশিমাত্রায় এই নবজাগরণের অংশীদার হতে পারেন নি।

আলিগড় আন্দোলনের গুরুত্ব:

নানাবিধ ত্রুটিবিচ্যুতি সত্ত্বেও আলিগড় আন্দোলন মুসলিম সমাজকে আশার আলো দেখায়। তারা অনেকাংশে কুসংস্কারমুক্ত হয় এবং আধুনিকমনস্ক হয়ে ওঠেন। এই আন্দোলন মুসলিমসমাজকে ভারতীয় রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করে। ঐতিহাসিক কে কে আজিজ তাঁর দ্য মেকিং অফ পাকিস্তান গ্রন্থে লিখেছেন, ‘এই আন্দোলন ছিল অংশত সাহিত্য-বিষয়ক, অংশত শিক্ষা-বিষয়ক, অংশত ধর্মীয় এবং সম্পূর্ণভাবে সাংস্কৃতিক।’

GSschool.in হল স্কুলভিত্তিক পড়াশোনার জন্য একটি সহায়ক ওয়েবসাইট। আমি সুকান্ত দাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে এম.এ করেছি এবং শিক্ষকতায় যুক্ত আছি। এখানে স্কুল স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নোটস, প্রশ্নপত্র, এবং পড়াশোনার টিপস দেওয়া হয়।

Post Comment

error: Content is protected !!