×

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ আলোচনা কর: Causes of World War II.

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ আলোচনা কর: Causes of World War II.

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫) মানব ইতিহাসের ভয়াবহতম যুদ্ধ। এই যুদ্ধে পৃথিবীর প্রায় সব দেশই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে। যুদ্ধটি ইউরোপ থেকে শুরু হলেও ধীরে ধীরে এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকা মহাদেশে বিস্তার লাভ করে। এর ফলে শুধু লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায়নি, বিশ্ব-রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজজীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটে।

অপমানজনক ভার্সাই সন্ধি:

বিভিন্ন ঐতিহাসিকগণ ১৯১৯খ্রিঃ ভার্সাই সন্ধিকে মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারন হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ী মিত্রপক্ষ জার্মানির উপর অপমানজনক ভার্সাই সন্ধির শর্ত চাপিয়ে দিয়েছিল। যা আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জার্মান জাতির পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি। বরং জার্মান জাতির মধ্যে প্রতিশোধস্পৃহাকে আরও জাগরিত করেছিল। জার্মানি এই একতরফা ও জবরদস্তিমূলক চুক্তি ভেঙে ফেলার অপেক্ষায় ছিল। তাই ঐতিহাসিক ই.এইচ.কার যথার্থই বলেছেন যে ,ভার্সাই চুক্তির মধ্যেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ নিহিত ছিল।

উগ্র জাতীয়তাবাদ:

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারন ছিল জার্মানি ,ইতালি ও জাপান এই তিন দেশের উগ্র জাতীয়তাবাদী নীতি। হেরেনভক তত্বে বিশ্বাসী হিটলার মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন ,জার্মানরাই হল বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতি। তিনি জার্মানিকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শক্তিতে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। হিটলারের আগ্রাসী নীতির সঙ্গে জার্মানির উগ্র জাতীয়তাবাদের সমন্বয়ে যে সাম্রাজ্যবাদী নীতির জন্ম হয়েছিল তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে অনিবার্য করে তুলেছিল।

অতৃপ্ত জাতীয়তাবাদ:

মনে করা হয় জার্মানির অতৃপ্ত জাতীয়তাবাদই ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারন। এই অতৃপ্ত জাতীয়তাবাদকে চরিতার্থ করতে নাৎসি দলের ক্ষমতা দখলের মধ্যে দিয়ে জার্মানিতে প্রাক – বিশ্বযুদ্ধকালীন সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছিল।

ইঙ্গ-ফ্রান্স তোষণ নীতি:

ইউরোপের প্রথম সারির দুই দেশ ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স, জার্মানির প্রতি তোষণ নীতি গ্রহণ করেছিল। তারা ভেবেছিল এই তোষণ নীতির মাধ্যমেই একমাত্র হিটলারকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। কিন্তু তাদের এই কর্মপন্থা হিটলারের আগ্রাসী মনোভাবকে চূড়ান্ত মাত্রা দেয়। তবে এক্ষেত্রে বলা যায়, জার্মানির তুলনায় রাশিয়াকে আরো বিপজ্জনক মনে করেই জার্মানির প্রতি ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স তোষণ নীতি গ্রহণ করেছিল। কিন্তু এই তোষণ নীতির ফলে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির আগ্রাসন আরো বেড়ে গিয়েছিল।

পরস্পরবিরোধী শক্তিজোট গঠন:

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে পরস্পর বিরোধী শক্তিজোট গঠন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি রচনা করেছিল। একদিকে জার্মানি, ইতালি, জাপান এই অতৃপ্ত রাষ্ট্রগুলি রোম–বার্লিন–টোকিও অক্ষশক্তি গঠন করেছিল। অপরদিকে জোটবদ্ধ হয়ে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স গঠন করেছিল মিত্রশক্তি। যুদ্ধ চলাকালীন আমেরিকা ও রাশিয়া মিত্রশক্তিতে যোগদান করে মিত্রশক্তিকে আরোও জোরদার করেছিল।

জাতিসংঘের ব্যর্থতা:

জাতিসংঘের ব্যর্থতাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে শান্তি প্রতিষ্ঠার সংকল্প নিয়ে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু জাতিসংঘ তার কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয়েছিল। জাতিসংঘ বৃহৎ শক্তিবর্গের অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে অপারগ থাকায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতি সংঘটিত হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, ইতালির আবিসিনিয়া অধিকার কিংবা জাপানের মাঞ্চুরিয়া অধিকারের ঘটনায় জাতিসংঘ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিল।

হিটলারের পোল্যান্ড আক্রমণ:

রোম, বার্লিন, টোকিও অক্ষশক্তি গঠিত হওয়ার পর হিটলার পোলিশ করিডর দাবি করেন। ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড-এর বিরোধিতা করে পোল্যান্ডের পক্ষ নেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের এই সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে ১ লা সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল‍্যান্ডের উপর অক্রমন চালায়। হিটলারের এই সিদ্ধান্তের যথাযোগ্য উত্তর দিতে ৩রা সেপ্টেম্বর ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড পোল‍্যান্ডের পক্ষে ও জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এর ফলে সূচনা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের।

GSschool.in হল স্কুলভিত্তিক পড়াশোনার জন্য একটি সহায়ক ওয়েবসাইট। আমি সুকান্ত দাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে এম.এ করেছি এবং শিক্ষকতায় যুক্ত আছি। এখানে স্কুল স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নোটস, প্রশ্নপত্র, এবং পড়াশোনার টিপস দেওয়া হয়।

Post Comment

error: Content is protected !!